করোনা মহামারিতে সম্মুখযোদ্ধা পুলিশ

জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে জীবনবাজি রেখে প্রতিনিয়তই ভুমিকা রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। করোনা সংকটেও তার ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুভয়কে জয় করে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি সদস্যই সাহসিকতার সঙ্গে করোনাযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন বুদ্ধিদীপ্ত ও বহুবিধ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদের দিকনির্দেশনা এবং একঝাঁক মেধাবী ও সাহসী রেঞ্জ প্রধান ডিআইজিদের নেতৃত্বে। পাশাপাশি পূর্ণ মনোবল নিয়ে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতেও করোনা জয়ের লক্ষে কাজ করছেন সবকটি মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা। নেতৃত্বে রয়েছেন মেধাবী কয়েকজন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানার তথ্যমতে গতকাল পর্যন্ত করোনায় ৫০ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৩০ জন। এ সংকট মোকাবেলায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশ পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনাররা। সাম্প্রতিক করোনাকালীন কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। জানিয়েছেন করোনা মোকাবিলাসহ অন্যান্য কার্যক্রমের কথা। নিজস্ব প্রতিবেদক বশির হোসেন খানকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক নুর মোহাম্মদ মিঠু।
ড. খঃ মহিদ উদ্দিন, ডিআইজি (খুলনা রেঞ্জ) : স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সর্বশেষ চলমান করোনা সংকট, এর মাঝেও বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ শক্তিশালী ও গতিশীল এক বাহিনীতে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। অকুতোভয়-নির্ভীক সাহসিকতার মধ্য দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে মানুষের জন্য কল্যাণমুখী করার যে প্রচেষ্টা, তার পরতে পরতে এ বাহিনীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ। এমনই একটি চ্যালেঞ্জ করোনা সংকট। যে সংকট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে প্রাণ দিয়েছেন পুলিশের বেশকজন সদস্য। তবুও মনোবল না হারিয়ে সংকট মোকাবিলা এবং দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে অভাবনীয় নজির ইতোমধ্যেই স্থাপন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তার শরিকদার খুলনা রেঞ্জ পুলিশও। এ বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন। সম্প্রতি তার সঙ্গে করোনা এবং পুলিশিংয়ের সার্বিক বিষয়ে কথা হয় আমার সংবাদের।
তিনি আমার সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি পুলিশের যে কার্যক্রম, বিশেষ করে কোভিড-১৯-এ যে কার্যক্রম সেটির ব্যাপারে আপনারা, দেশের সর্বসাধারণ এমনকি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীও আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের যে গৌরবময় ইতিহাস এটি কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকেই শুরু। তখন সর্বপ্রথম যে বুলেটটি ছুড়েছিল, সেটি বাংলাদেশ পুলিশ। তার পরবর্তীতেও বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাংলাদেশের যেকোনো ক্রাইসিস মুহূর্তে শর্তবিহীন (আনকন্ডিশনাল) সরকারের জন্য, দেশের জন্য তাদের সর্বোচ্চ শ্রম ও মেধা তারা দিয়েছে। এমনকি প্রয়োজনে তারা জীবনও উৎসর্গ করেছে। দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে, সরকারের স্বার্থে তারা কখনোই তাদের দায়িত্ব থেকে সরে যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ শুধু কোভিডের কারণে ভালো করছে, অন্যান্য সময়ে করেনি- তা কিন্তু নয়। পুলিশ সব সময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে যেকোনো বড় ধরনের ঘটনা, মনুষ্য সৃষ্ট যেকোনো বিপর্যয়েও পুলিশই সবার আগে প্রথম সারিতে চলে আসে। পুলিশ কোনো দিনও কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব সে মনে করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দেশের সমৃদ্ধি অর্জন করা সবই তারা তাদের কাজের অংশ বলেই মনে করে।
তিনি বলেন, পুলিশের এ বিষয়গুলো আগে এতটা প্রচার হতো না, মিডিয়ায় আসতো না। কিন্তু কোভিডকালীন সময়ে সোস্যাল মিডিয়ায়, ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আসার কারণেই এবার ফলাও করে জনসম্মুখে উঠে আসছে। তবে তিনি মনে করছেন, পুলিশের জন্য এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। হয়তো এবার একটু বেশি চোখে লাগছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজের এই যে ধারাবাহিকতা এটিকে আমরা সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাই- আইজিপি মহোদয়ের নেতৃত্বে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশ, আমরা বদ্ধপরিকর, সেখান থেকে আমরা পিছ পা হবো না, আমরা যাবো সামনের দিকে। আপনারা খেয়াল করবেন যে, বিগত ১০ বছর আগেও পুলিশ যে জায়গায় ছিলো সে জায়গা থেকে এখন অনেক সামনে। তাই এখান থেকে পিছ পা হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমাদের পুলিশের প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা, ওয়েলফেয়ার, তাদের অপারেশনাল কার্যক্রমের সক্ষমতাসহ প্রতিটি বিষয়ে আমরা আমাদের সাধ্যমতো গুরুত্ব দিচ্ছি। কোভিডকালীন সময়ে আমরা আমাদের প্রায় ৪০ জনের বেশি সহকর্মীকে হারিয়েছি। সকল পুলিশ সদস্যসহ কোভিডের কারণে বাংলাদেশের যত মানুষ মারা গেছেন সবার জন্য আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।আমাদের পুলিশের বর্তমান যে অবস্থা সেটিকে আরও কি করে সামনের দিকে নেয়া যায়, মানুষের আরও কাছাকাছি কীভাবে নেয়া যায়, মানুষের জন্য কল্যাণমুখী পুলিশ কীভাবে করা যায়- সেটির প্রচেষ্টা আইজিপির নেতৃত্বে চলছে এবং এটি আমরা সামনের দিকে নিয়ে যাবো। সেজন্য আমরা ওয়েল ইক্যুইপ্ট হবো, ট্রেনিং থেকে শুরু করে আমাদের আচার-আচরণ, হিউমেন্ট্রিয়ান বিষয়গুলো, ইন্টেলিজেন্সসহ সব দিকেই আমরা চেষ্টা করবো মানুষের জন্য আরও কল্যাণকর কিছু করার।